আওয়ামী লীগ আমলে ছিলেন নিয়মিত মাদক কারবারি। এখন তিনি শ্রমিকদল নেতা। ওই মাদক ব্যবসায়ীর নাম রেজাউল সরদার ওরফে রেজু। রেজাউল ও তার স্ত্রী রুনুর বিরুদ্ধে বাউফল থানায় একাধিক মাদক মামলা চলমান রয়েছে। মাদক কারবারে জড়িত এই দম্পতি একধিকবার মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। এছাড়াও কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মিজান মোল্লার একান্ত সহচর হিসেবে পরিচিত তিনি। বর্তমানে ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি পরিচয়ে ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে প্রভাব বিস্তার করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন এই রেজাউল। তবে উপজেলা শ্রমিক দলের আহবায়ক জানালেন অক্টোবর মাসেই রেজাউলকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু বহিষ্কারের অফিসিয়াল আদেশ দেখাতে পারেনি শ্রমিকদল।
স্থানীয়রা জানান, রেজাউল সরদার ওরফে রেজু একজন পেশাদার মাদক কারবারি। কালাইয়া বন্দরের গোড়স্থানের সরকারি যায়গা দখল করে ঘর নির্মাণ করেছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মিজান মোল্লা। সেই ঘরে মাদক ও জুয়ার আসর পরিচালনা করতেন ওই রেজাউল করিম। ৫ই আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রেজাউলের পরিচালিত ওই মাদকের আখড়ার ঘর গুড়িয়ে দেয় ছাত্র জনতা। এরপরে অনেক দিন তিনি পালিয়ে বেড়িয়েছেন। এখন তিনি কালাইয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি পরিচয় ব্যবহার করে ব্যানার ফেস্টুন টানিয়েছেন। বিএনপি দলীয় প্রভাব বিস্তার করে তিনি ফের মাদক কারবার শুরু করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ফাতিমা জামান সামিয়া জানান, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সন্ত্রাসী বাহিনী যুবলীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় রেজু এতদিন মাদক ব্যবসা করেছে। এখন ব্যবসা চালিয়ে যেতে সে শ্রমিক দলের পদ ব্যবহার করছেন। হাসিনা সরকার পতনের পরেও রেজাউলের স্ত্রী রুনু বেগমকে মাদকসহ আটক করে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলো ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ বিষয়ে জানতে রেজাউল সরদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এদিকে উপজেলা শ্রমিকদলের আহবায়ক হাসান মাহমুদ মনজু বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি করেছে ইউনিয়ন শ্রমিক দল। তাই রেজাউল কিভাবে কমিটিতে পদ পেয়েছেন, আমি জানতাম না। তবে কয়েক মাস আগে জানতে পেরেছি, আমি সাথে সাথে ইউনিয়ন সভাপতিকে তাকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছি।
কালাইয়া ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সভাপতি বাসার শিকদার বলেন, ‘উপজেলা শ্রমিকদলের আহবায়ক নির্দেশনা দিলে আমি ফেইসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে তাকে বহিষ্কার করেছি। সে যে ব্যানার ফেস্টুন টানাচ্ছেন বিষয়টা আমাদের জানায়নি। আমরা এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
রেজাউল যুবলীগ সভাপতির একান্ত সহকারী হয়েও পদ কিভাবে পেলেন এবং অফিসিয়ালি তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, ‘তখন ওয়ার্ড বিএনপির সবাই বলেছিলেন সে বিএনপি করে, তাই তাকে সভাপতি পদ দেয়া হয়েছিলো। তবে তাকে অফিসিয়ালি প্যাডে বহিষ্কার করা না হলেও, উপজেলা কমিটির সকলের সিদ্ধান্তে ফেইজবুক স্ট্যাটাস দিয়ে আমি তাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিলাম।’
রেজাউল সরদার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা চলমান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাউফল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতিকুল ইসলাম জানান, ‘মাদকের বিষয় পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে। মাদক কারবারি কোন দলের সেটা পুলিশ কখনোই দেখে না, অপরাধের ধরন অনুযায়ী মাদক কারবারির বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করে বলেও জানান তিনি।’